Breaking

Friday, November 23, 2018

ইংল্যান্ডে পড়তে যান জেনে-শুনে

ইংল্যান্ডে পড়তে যান জেনে-শুনে
ইংল্যান্ডে পড়তে যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বহু বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। শিক্ষাসংক্রান্ত ভিসার একটি শিথিল আইনের সুবাদে দলে দলে শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে লন্ডনে। আর এদের বেশির ভাগই লন্ডনে এসে চরম দুর্দশা আর হতাশার মুখোমুখি হচ্ছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে ইংল্যান্ড থেকে লিখেছেন সোয়েব উদ্দিন কবীর

কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবের এক মহিলা কমিশনারের ছেলে ইমদাদ। বাবা বেঁচে নেই, বড় ভাই একটি ছোট চাকরি করেন। দেশে অনার্স কোর্স শেষ না করেই ইমদাদ লন্ডনে চলে এসেছেন উচ্চশিক্ষার আশায়। এক বছরের কোর্স ফি বাবদ এজেন্টকে দিয়েছেন নয় লাখ টাকা। লন্ডনে এসে দেখেন এক বছরের ফি মাত্র তিন হাজার পাউন্ড। হাতখরচ বাবদ নিয়ে এসেছিলেন এক হাজার পাউন্ড। এর মধ্যে তাও ফুরিয়ে গেছে। প্ল্যাস্টোতে এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছেন, তাও টাকা দিয়ে। তিন রুমের ছোট্ট একটি ফ্ল্যাটে ১২-১৩ জন একসঙ্গে গাদাগাদি আর ফ্লোরিং করে থাকেন। ব্রিকলেনের শাহনান জব সেন্টারে সকাল থেকে বসে থাকেন, যদি ভাগ্যে একটি কাজ জোটে।
ইফতেখার যুক্তরাজ্য এসেছেন জুলাই মাসে। এখন পর্যন্ত কোনো কাজের সন্ধান পাননি। অর্থকড়ি যা নিয়ে এসেছিলেন, তা শেষের পথে। এদিকে পরিবারের পক্ষ থেকেও আর টাকা পাঠানো সম্ভব নয়।
হাসিবের অবস্থা আরও করুণ। কর্মহীন প্রায় চার মাস। বাবার পেনশনের টাকা খরচ করে ইংল্যান্ডে এসেছেন সংসারের ভাগ্য ফেরাতে। বাড়ি থেকে আর টাকা পাঠানো সম্ভব নয়। আশা ছিল, পড়াশোনার পাশাপাশি উপার্জন করে সংসারের জন্য কিছু করার। এখন সব ওলট-পালট মনে হচ্ছে।
ঢাকা সিটি কলেজে পড়াশোনা শেষ করে সুমিলা সাড়ে সাত লাখ টাকা খরচ করে ইংল্যান্ডে এসেছেন। সুমিলা বলেন, ‘মাসে আড়াই শ পাউন্ড ভাড়া দিয়ে একটি বাসার সিটিং ফ্লোরে ঘুমাই। খেয়ে না-খেয়ে কোনোমতে দিন কাটাই। দেশ থেকে আনা টাকা শেষ হয়ে গেলে কীভাবে ভাড়া দেব, কোথায় থাকব, জানি না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জব সেন্টারগুলোয় ধরনা দিয়েও কোনো কাজের সুযোগ হচ্ছে না। অথচ এ দেশে আসার আগে বলা হয়েছিল, কাজের কোনো অভাব নেই। ঘণ্টাপ্রতি সাত পাউন্ড পাওয়া যাবে। বলা হয়েছিল, হোস্টেল আছে; এয়ারপোর্ট থেকে গিয়েই হোস্টেলে ওঠা যাবে।’
ইমদাদ, ইফতেখার, সুমিলা কিংবা হাসিবের মতো বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রী বর্তমানে ইংল্যান্ডে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
ইংল্যান্ডে সাম্প্রতিক একটি শিথিল স্টুডেন্ট ভিসা আইনের সুবাদে লন্ডনে যাওয়া এখন সহজ হয়ে গেছে অনেকটাই। কর্তৃপক্ষকে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা আর আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ দেখাতে পারলেই ভিসা নিশ্চিত। বাংলাদেশের কেউ এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় পাস করলে এ নিয়মে ইংল্যান্ডে আসার সুযোগ পাচ্ছে। এ কারণে মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরাও কোনো না কোনোভাবে ন্যূনতম আর্থিক সামর্থ্য দেখিয়ে ভিসা পেয়ে যাচ্ছে।
তাদের প্রায় সবারই লক্ষ্য খণ্ডকালীন কর্মসংস্থানের সঙ্গে সঙ্গে পড়াশোনা করা। কেউ কেউ আবার পড়াশোনার বিষয়টিকে সামনে রাখলেও কোনো না কোনোভাবে ইংল্যান্ডে কর্মসংস্থান আর স্থায়ীভাবে থাকার লক্ষ্য নিয়েই দেশ ত্যাগ করছে। এ কারণে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে যাচ্ছে তার শিক্ষার মানের ব্যাপারেও তেমন একটা উত্সাহ নেই তাদের। একবার কোনোমতে যেতে পারলেই হয় তারপর একটা ব্যবস্থা হয়েই যাবে—এমন একটা বিশ্বাস নিয়ে ইংল্যান্ডে পাড়ি দিতে মরিয়া হয়ে উঠছে শিক্ষার্থীরা। তাদের অনেক স্বপ্ন দেখিয়ে ইংল্যান্ডে যেতে উত্সাহ জোগাচ্ছে স্থানীয় দালাল, এজেন্ট, ভিসা তদবিরকারী তথা নানা রকম ফরেন এডুকেশন সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।
কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বছরের ফি পরিশোধ কিংবা সমপরিমাণ টাকা ব্যাংকে এবং প্রথম নয় মাসের হাতখরচ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেখালেই বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরা এখন লন্ডনে আসার সুযোগ পাচ্ছে। ব্রিটিশ হোম অফিস নয় মাসের খরচের পরিমাণও স্থির করে দিয়েছে। লন্ডন শহরের কলেজ হলে প্রতি মাসে ৮০০ পাউন্ড হারে নয় মাসে সাত হাজার ২০০ পাউন্ড; লন্ডন শহরের বাইরের কলেজ হলে প্রতি মাসে ৬০০ পাউন্ড হারে নয় মাসে পাঁচ হাজার ৪০০ পাউন্ড। আবেদনকারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২৮ দিন টাকা দেখালে ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশন স্টুডেন্ট ভিসা দিচ্ছে। সেই হিসাবে বাংলাদেশের কোনো ছাত্রছাত্রী প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো ব্যাংক-ব্যালান্স দেখাতে পারলেই ভিসা পেয়ে যাচ্ছে। এ সুবাদে কেউ কেউ ধার করে বা চড়া সুদে মাসখানেকের জন্য অন্যের টাকাও নিজের অ্যাকাউন্টে দেখিয়ে কাজ সেরে নিচ্ছে।
কিন্তু এভাবে ইংল্যান্ডে পাড়ি দেওয়া সম্ভব হলেও মূল বিপত্তিটা শুরু হয় ইংল্যান্ড পৌঁছানোর পরপরই। মেধার জোরে স্কলারশিপ নিয়ে যে কেউই ইংল্যান্ডসহ বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। আবার যার প্রচুর টাকা আছে তার মেধা যতটাই থাকুক লন্ডনে পৌঁছে পড়াশোনা করার সুযোগ লাভ করা তার জন্য কঠিন কিছু নয়। কিন্তু যখন ধারকর্জ করে কিংবা জমিজমা বিক্রি করে কেউ ইংল্যান্ডে গিয়ে কাজের সংস্থান করতে ব্যর্থ হয়, আবার দেশে পরিবারের পক্ষ থেকেও নিয়মিত টাকা না নিতে পারে; তার জীবনের অনিশ্চয়তা কতটুকু তা সহজেই অনুমেয়। অ্যাকাউন্ট দেখানো টাকাটাও যদি অন্যের হয় তাহলে সংকট হবে আরও ভয়াবহ। বিশ্বমন্দার কারণে ইংল্যান্ডে এখন কাজ জোগাড় করা ভীষণ কঠিন। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা অবশ্য এতটা ভালো কাজ আশা করে না। যেকোনো অড জব, নিদেনপক্ষে হোটেলে আলু-পেঁয়াজ কাটা কিংবা কিচেন অ্যাসিস্টেন্টের মতো ছোটখাটো কাজ হলেও তারা করতে চায়। কিন্তু চাকরি প্রার্থীদের ভিড় বেড়ে যাওয়ায় এখন কেবল থাকা-খাওয়ার বিনিময়েও কাজ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে মজুরি কমিয়ে দেওয়া, প্রতারণামূলক নিয়োগদান এবং জব সেন্টার কর্তৃক টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
যেসব বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রী কাজ জোগাড় করতে পারেনি অথচ টাকা শেষ হয়ে গেছে তাদের অনেকের অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। অনেকে বাধ্য হয়ে মসজিদে রাত্রি যাপন করছে। জব সেন্টারে নোয়াখালী থেকে আসা লন্ডন রিডিং কলেজের ছাত্র আরিফ আহমেদ জানান, তাঁদের দুই-তিনজনের থাকার কোনো জায়গা নেই। ১০টা পর্যন্ত পার্কে থাকেন। কিন্তু এর পর আর থাকা যায় না। পার্কের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন কোনো মসজিদে আশ্রয় খুঁজতে হয়। একদিন সকালে উঠে দেখেন তাঁর মানিব্যাগ ও জরুরি কাগজপত্র চুরি হয়ে গেছে। বর্তমানে পূর্ব লন্ডনের বাঙালি জব সেন্টারগুলোয় উপচে পড়ছে বাংলাদেশ থেকে সদ্য আসা শিক্ষার্থীদের ভিড়। বিশেষ করে ইংল্যান্ড-জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বাঙালি রেস্টুরেন্টগুলোতে জড়ো হচ্ছে শত শত শিক্ষার্থী। জব সেন্টারগুলো জানাচ্ছে, কর্মসংস্থানের এ বিপুল চাহিদা মেটানোর কোনো ব্যবস্থা তাদের হাতে মজুদ নেই। এ অবস্থায় এসব শিক্ষার্থী চরম হতাশা আর অনিশ্চয়তায় ভুগছে।

ইংল্যান্ডে পড়তে যেতে ইংল্যান্ডে যারা প্রকৃতই লেখাপড়া করতে ইচ্ছুক তারা শিথিল ভিসা সুবিধার সুযোগ নিতে পারে বৈকি। তবে অবশ্যই সবকিছু বুঝেশুনে যাওয়া উচিত। মধ্যস্বত্বভোগী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের চটকদার কথায় নয়, যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবে তার সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জেনেই এগোতে হবে। এছাড়া ইংল্যান্ডে গেলেই কোনো একটা পার্টটাইম কাজের ব্যবস্থা হয়ে যাবে—এ রকম বিশ্বাস না রাখাই ভালো। আর কাজের সংস্থান যত দিন না হবে তত দিন থাকা-খাওয়া তথা জীবনযাপনের জন্য পর্যাপ্ত টাকার সংস্থান অবশ্যই থাকতে হবে। না হলে বিপদ অনিবার্য।
দ্রষ্টব্য এটি শুধুমাত্র প্রকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য যারা সত্যিই বিদেশ থেকে বিদেশে পড়াশোনা করতে আগ্রহী। আবেদনকারীরা দৃঢ়ভাবে আমাদের অফিসে :
 সরাসরি যোগাযোগ বা মৌলিক তথ্যের জন্য ফোন 01911878274 এ সরাসরি যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়। যদি আপনি আরও যেতে চান তবে পাসপোর্ট সহ আপনার সমস্ত অ্যাকাডেমিক নথির সাথে আমাদের অফিসে যান।

সানরাইজ এডুকেশন কন্সালটেন্টস
ফোন: 01911878২74; 01707272625
ইমেইল: info@sunrise-bd.net
ওয়েবসাইট: www.sunrise-bd.net

No comments:

Post a Comment